খলীফা শরী'আহ্ বিধান দিয়ে আইন গ্রহণে বাধ্য
(নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি বিশ্বখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম শাইখ আতা ইবনু খলীল আল-রাশতা কর্তৃক সম্পাদিত ‘আজহিজাতু দাওলাতিল খিলাফাহ - ফিল হুকমি ওয়াল ইদারাহ’ বইটির বাংলা অনুবাদ এর একাংশ হতে গৃহীত)
খলীফা তার আইন গ্রহণের ক্ষমতার (power of adopting laws) ক্ষেত্রে শরী'আহ বিধান অনুসরণ করতে বাধ্য। তার এমন কোন আইন গ্রহণ করার অধিকার নেই যার কোন শরী'আহ দলীল নেই। এছাড়া, তিনি যে সব শরী'আহ বিধিবিধান অনুসরণ করবেন এবং (নিজস্ব কিংবা অন্য কারও) ইজতিহাদের যে পদ্ধতি অনুসরণ করবেন তা দিয়েও আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা।
সুতরাং, এমন কোন আইন গ্রহণ করা তার জন্য নিষিদ্ধ, যা তার অনুসৃত ইজতিহাদের পদ্ধতির সাথে সাংঘর্ষিক।
একইসাথে, এমন কোন আইনকানুন জারি করাও তার জন্য নিষিদ্ধ, যা তার অনুসৃত আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। সুতরাং, আইন গ্রহণের ক্ষমতার ক্ষেত্রে খলীফার সীমাবদ্ধতা দু'টি।
খলীফার প্রথম সীমাবদ্ধতা অর্থাৎ, আইন গ্রহণের ক্ষেত্রে খলীফা যে শরী'আহ্ বিধান অনুসরণ করতে বাধ্য - এ ব্যাপারে শরী'আহ্ দলীল নিম্নরূপ:
১. আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা খলীফা সহ প্রতিটি মুসলিমকে তাদের সকল কাজের ক্ষেত্রে ঐশী বিধান (শরী'আহ্) মেনে চলা বাধ্যতামূলক করেছেন। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেন,
'কিন্তু না, তোমার রবের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদ-বিসম্ববাদের বিষয় সমূহে তোমাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়।' [সূরা নিসা : ৬৫]
আইনপ্রণেতার (আল্লাহ্'র) বাণী বোঝার ক্ষেত্রে যদি কোনপ্রকার মতভেদের সৃষ্টি হয় (অর্থাৎ, কোন আয়াতের যদি একাধিক ব্যাখ্যা থাকে) তবে সেক্ষেত্রে, মুসলিমরা একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যার ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট শারী'আহ্ আইন অনুসরণ করতে বাধ্য। সুতরাং, (একই বিষয়ের জন্য অনুমোদিত) বিভিন্ন শরী'আহ্ আইন থেকে একটি নির্দিষ্ট আইনকে নিজের জন্য গ্রহণ করতে মুসলিমরা বাধ্য, যখন তারা উক্ত কাজটি সম্পাদন করতে চায় বা বিধানটি প্রয়োগ করতে চায়। এ নিয়মটি একইভাবে খলীফার কার্যসম্পাদনের জন্যও প্রযোজ্য; অর্থাৎ, যখন তিনি শাসনকার্য সম্পাদন করতে চান তখন এ বিধানটি সমভাবে তার উপরও প্রযোজ্য হবে। (অর্থাৎ, তাকেও এক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট শরী'আহ্ আইন অনুসরণ করতে হবে।)
২. বাই'আতের শপথে উচ্চারিত শব্দসমহ ও খলীফাকে শরী'আহ আইন-কানুন দ্বারা শাসন করতে বাধ্য করে, কেননা খলীফা আল্লাহ্'র কিতাব ও রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ্'র ভিত্তিতেই বাই'আত প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। সুতরাং, এ শপথ ভঙ্গ করা তার জন্য আইনত নিষিদ্ধ এবং যদি তিনি সজ্ঞানে ও দৃঢ়তার সাথে তা করে থাকেন তবে তা কুফরী হিসাবে বিবেচিত হবে।
কিন্তু, তিনি যদি দৃঢ়তার সাথে তা না করে থাকেন, তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি অবাধ্য, পথভ্রষ্ট এবং বিদ্রোহী বলে বিবেচিত হবেন।
৩. বস্তুতঃ খলীফাকে শাসক হিসাবে নিয়োগ দেয়াই হয় হুকুম-শারী'আহ্ বাস্তবায়ন করার জন্য, সেকারণে মুসলিমদের শাসনের ক্ষেত্রে শারী'আহ্ আইন-কানুন ছাড়া অন্য কোনকিছু বিবেচনায় আনা তার জন্য নিষিদ্ধ। কারণ, হুকুম-শারী'আহ্ নিজেই একে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। যে ব্যক্তি হুকুম শারী'আহ্ ছাড়া অন্য কোন কিছু দিয়ে শাসন করবে, প্রকৃতঅর্থে সে তার ঈমানকেই ক্ষতিগ্রস্থ করবে। আর, এটা হচ্ছে এমন একটি বিষয় যে ব্যাপারে অকাট্য শারী'আহ্ দলীল রয়েছে।
সুতরাং, খলীফা কেবলমাত্র হুকুম শরী'আহ্'র ভিত্তিতেই আইন গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারবেন এবং এ ব্যাপারে তিনি দায়বদ্ধ। এছাড়া, তিনি যদি দৃঢ়তার সাথে জেনেশুনে শরী'আহ ছাড়া অন্য কোনকিছুর ভিত্তিতে আইন গ্রহণ করেন তাহলে তা প্রকাশ্য কুফরী হিসাবে বিবেচিত হবে। আর, তিনি যদি শারী'আহ্ বহির্ভূত ভিত্তিতে বিশ্বাস না করে তা বাস্তবায়ন করেন, তাহলে তিনি অবাধ্য, পথভ্রষ্ট এবং বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
আর, খলীফার দ্বিতীয় সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে বলা যায় যে, খলীফা যে সমস্ত শারী'আহ্ বিধি-বিধান অনুসরণ করবেন এবং ইজতিহাদের যে পদ্ধতি অনুসরণ করবেন, তা দিয়েই তার কার্যাবলী সীমাবদ্ধ থাকবে। এ ব্যাপারে শরী'আহ্ দলিল হল, তিনি যে শারী'আহ্ আইন বাস্তবায়ন করবেন, ঐ আইনের ব্যাপারে তারই দ্বায়বদ্ধতা থাকবে, অন্য কারো নয়। অন্যভাবে বললে বলা যায় যে, খলীফা তার কার্যাবলী সম্পাদন করার জন্য ঐ নির্দিষ্ট শরী'আহ্ আইনটিই গ্রহণ করেছেন, যে কোন আইন গ্রহণ করেননি; তাই এ আইনের ব্যাপারে তার নিজস্ব দ্বায়বদ্ধতা রয়েছে। অর্থাৎ, খলীফা যদি কোন বিষয়ে নিজস্ব ইজতিহাদের মাধ্যমে কোন আইন গ্রহণ করেন কিংবা কোন মুজতাহিদের ইজতিহাদ অনুসরণ করেন, তবে উক্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে ঐ নির্দিষ্ট বিধানটি তার জন্য আল্লাহ্'র বিধান হিসাবে বিবেচিত হবে। তাই, মুসলিমদের জন্যও তাকে ঐ আইন গ্রহণ করতে হবে। অন্য কোন আইন গ্রহণ করা তার জন্য নিষিদ্ধ হবে কারণ, অন্য কোন আইনের ব্যাপারে তার কোন শরী'আহ্ দ্বায়বদ্ধতা নেই অর্থাৎ, এটি তার জন্য আল্লাহ্'র বিধান হিসাবে বিবেচিত নয় তাই, একইভাবে এটি মুসলিমদের জন্যও শারী'আহ্ বিধান বলে বিবেচিত হবে না। সুতরাং, জনগণকে শাসন করার ক্ষেত্রে তার গ্রহণকৃত শারী'আহ আইন সমূহের মাধ্যমেই তাকে বিধিবিধান জারি করতে হবে। তিনি এমন কোন আইন বা বিধি-বিধান জারি করতে পারবেন না যা তার অনুসৃত শরী'আহ্ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। কারণ, যদি তিনি তা করেন অর্থাৎ, তার গ্রহণকৃত শরী'আহ্ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক অন্য কোন (শরী'আহ্) আইনের মাধ্যমে তিনি যদি কোন বিধান জারি করেন, তবে এক্ষেত্রে তা হুকুম-শারী'আহ্'র সাথে সাংঘর্ষিক বলেই বিবেচিত হবে।
ইসতিনবাত বা ইজতিহাদের পদ্ধতির ভিন্নতার কারণেও শরী'আহ্'র হুকুম বোঝা বা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ভিন্নতা সৃষ্টি হয়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, খলীফা যদি আইনপ্রণেতার বাণী থেকে উৎসারিত ইল্লাহ্কে'ই (কোন হুকুম প্রণয়নের কারণ, effective legal cause of a rule) শরী'আহ্ সঙ্গত ইল্লাহ্ বলে মনে করেন এবং সেইসাথে, তিনি লাভ-ক্ষতিকে (মাসলাহা) শারী'আহ সঙ্গত ইল্লাহ্ কিংবা মাসালিহ্ মুরসালাকে (অসংজ্ঞায়িত পার্থিব লাভ-ক্ষতি) শারী'আহ সঙ্গত দলীলপ্রমাণ হিসেবে বিবেচনা না করেন, তাহলে এটাই তার জন্য ইসতিনবাতের পদ্ধতি হিসাবে বিবেচিত হবে। কারণ, এ পদ্ধতিই তিনি নিজের জন্য গ্রহণ করেছেন। এক্ষেত্রে, তার গৃহীত বিধি-বিধান এই নীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে এবং তিনি এমন কোন আইন গ্রহণ করতে পারবেন না যার দলীল-প্রমাণ মাসালিহ্ মুরসালাহ্'র উপর প্রতিষ্ঠিত; কিংবা, এমন কোন ক্বিয়াস গ্রহণ করতে পারবেন না যার ইল্লাহ্ আল্লাহ্'র বাণী থেকে উৎসারিত হয়নি। এই ধরনের শরী'আহ্ আইন তার জন্য আল্লাহ্'র বিধান হিসাবে বিবেচিত হবে না এবং এ আইনকানুনের ব্যাপারে তার কোনপ্রকার দ্বায়বদ্ধতাও থাকবে না; কেননা তিনি এ সমস্ত বিধিবিধানের উৎসকে শারী'আহ্ সঙ্গত উৎস বলে বিবেচনা করেননি। সুতরাং, তার দৃষ্টিকোন থেকে এগুলো শারী'আহ্ আইন হিসাবে বিবেচিত হবে না। আর, যেহেতু এটি খলীফার জন্য শারী'আহ্ আইন হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না, সুতরাং একইভাবে এটি মুসলিমদের জন্যও শারী'আহ্ আইন হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি যদি (তার গৃহীত ভিত্তি ছাড়া) অন্য কোন ভিত্তির উপর আইনকানুন গ্রহণ করেন, তাহলে বিষয়টি এমন হবে যেন তিনি শরী'আহ্ ব্যতীত অন্যকিছুকে ভিত্তি করে আইন গ্রহণ করলেন, যা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
আর, খলীফা যদি মুকাল্লিদ (অনুকারক) হন অথবা মুজতাহিদ ফী মাসা'লা হন অর্থাৎ একটি মাত্র বিষয়ের উপর তিনি ইজতিহাদ করে থাকেন; কিংবা তার যদি নিজস্ব কোন ইসতিনবাতের পদ্ধতি না থাকে, এ সমস্ত ক্ষেত্রে যে কোন শরী'আহ্ আইন গ্রহণ করার অধিকার তার রয়েছে, তার দলীল যাই হোক না কেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তার গ্রহণকৃত আইনকানুনের শারী'আহ সঙ্গত দলীল-প্রমাণ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত যে কোন বিধিবিধান গ্রহণের ক্ষেত্রে তার কোনপ্রকার সীমাবদ্ধতা থাকবে না। শুধুমাত্র কোন বিষয়ে নির্দেশ প্রদানের ক্ষেত্রেই তার সীমাবদ্ধতা থাকবে; কারণ তাকে তার গৃহীত বিধিবিধানের ভিত্তিতেই নির্দেশ প্রদান করতে হবে, অন্যকোন বিধানের উপর ভিত্তি করে নয়।
(নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি বিশ্বখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম শাইখ আতা ইবনু খলীল আল-রাশতা কর্তৃক সম্পাদিত ‘আজহিজাতু দাওলাতিল খিলাফাহ - ফিল হুকমি ওয়াল ইদারাহ’ বইটির বাংলা অনুবাদ এর একাংশ হতে গৃহীত)
খলীফা তার আইন গ্রহণের ক্ষমতার (power of adopting laws) ক্ষেত্রে শরী'আহ বিধান অনুসরণ করতে বাধ্য। তার এমন কোন আইন গ্রহণ করার অধিকার নেই যার কোন শরী'আহ দলীল নেই। এছাড়া, তিনি যে সব শরী'আহ বিধিবিধান অনুসরণ করবেন এবং (নিজস্ব কিংবা অন্য কারও) ইজতিহাদের যে পদ্ধতি অনুসরণ করবেন তা দিয়েও আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা।
সুতরাং, এমন কোন আইন গ্রহণ করা তার জন্য নিষিদ্ধ, যা তার অনুসৃত ইজতিহাদের পদ্ধতির সাথে সাংঘর্ষিক।
একইসাথে, এমন কোন আইনকানুন জারি করাও তার জন্য নিষিদ্ধ, যা তার অনুসৃত আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। সুতরাং, আইন গ্রহণের ক্ষমতার ক্ষেত্রে খলীফার সীমাবদ্ধতা দু'টি।
খলীফার প্রথম সীমাবদ্ধতা অর্থাৎ, আইন গ্রহণের ক্ষেত্রে খলীফা যে শরী'আহ্ বিধান অনুসরণ করতে বাধ্য - এ ব্যাপারে শরী'আহ্ দলীল নিম্নরূপ:
১. আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা খলীফা সহ প্রতিটি মুসলিমকে তাদের সকল কাজের ক্ষেত্রে ঐশী বিধান (শরী'আহ্) মেনে চলা বাধ্যতামূলক করেছেন। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেন,
'কিন্তু না, তোমার রবের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদ-বিসম্ববাদের বিষয় সমূহে তোমাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়।' [সূরা নিসা : ৬৫]
আইনপ্রণেতার (আল্লাহ্'র) বাণী বোঝার ক্ষেত্রে যদি কোনপ্রকার মতভেদের সৃষ্টি হয় (অর্থাৎ, কোন আয়াতের যদি একাধিক ব্যাখ্যা থাকে) তবে সেক্ষেত্রে, মুসলিমরা একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যার ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট শারী'আহ্ আইন অনুসরণ করতে বাধ্য। সুতরাং, (একই বিষয়ের জন্য অনুমোদিত) বিভিন্ন শরী'আহ্ আইন থেকে একটি নির্দিষ্ট আইনকে নিজের জন্য গ্রহণ করতে মুসলিমরা বাধ্য, যখন তারা উক্ত কাজটি সম্পাদন করতে চায় বা বিধানটি প্রয়োগ করতে চায়। এ নিয়মটি একইভাবে খলীফার কার্যসম্পাদনের জন্যও প্রযোজ্য; অর্থাৎ, যখন তিনি শাসনকার্য সম্পাদন করতে চান তখন এ বিধানটি সমভাবে তার উপরও প্রযোজ্য হবে। (অর্থাৎ, তাকেও এক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট শরী'আহ্ আইন অনুসরণ করতে হবে।)
২. বাই'আতের শপথে উচ্চারিত শব্দসমহ ও খলীফাকে শরী'আহ আইন-কানুন দ্বারা শাসন করতে বাধ্য করে, কেননা খলীফা আল্লাহ্'র কিতাব ও রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ্'র ভিত্তিতেই বাই'আত প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। সুতরাং, এ শপথ ভঙ্গ করা তার জন্য আইনত নিষিদ্ধ এবং যদি তিনি সজ্ঞানে ও দৃঢ়তার সাথে তা করে থাকেন তবে তা কুফরী হিসাবে বিবেচিত হবে।
কিন্তু, তিনি যদি দৃঢ়তার সাথে তা না করে থাকেন, তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি অবাধ্য, পথভ্রষ্ট এবং বিদ্রোহী বলে বিবেচিত হবেন।
৩. বস্তুতঃ খলীফাকে শাসক হিসাবে নিয়োগ দেয়াই হয় হুকুম-শারী'আহ্ বাস্তবায়ন করার জন্য, সেকারণে মুসলিমদের শাসনের ক্ষেত্রে শারী'আহ্ আইন-কানুন ছাড়া অন্য কোনকিছু বিবেচনায় আনা তার জন্য নিষিদ্ধ। কারণ, হুকুম-শারী'আহ্ নিজেই একে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। যে ব্যক্তি হুকুম শারী'আহ্ ছাড়া অন্য কোন কিছু দিয়ে শাসন করবে, প্রকৃতঅর্থে সে তার ঈমানকেই ক্ষতিগ্রস্থ করবে। আর, এটা হচ্ছে এমন একটি বিষয় যে ব্যাপারে অকাট্য শারী'আহ্ দলীল রয়েছে।
সুতরাং, খলীফা কেবলমাত্র হুকুম শরী'আহ্'র ভিত্তিতেই আইন গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারবেন এবং এ ব্যাপারে তিনি দায়বদ্ধ। এছাড়া, তিনি যদি দৃঢ়তার সাথে জেনেশুনে শরী'আহ ছাড়া অন্য কোনকিছুর ভিত্তিতে আইন গ্রহণ করেন তাহলে তা প্রকাশ্য কুফরী হিসাবে বিবেচিত হবে। আর, তিনি যদি শারী'আহ্ বহির্ভূত ভিত্তিতে বিশ্বাস না করে তা বাস্তবায়ন করেন, তাহলে তিনি অবাধ্য, পথভ্রষ্ট এবং বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
আর, খলীফার দ্বিতীয় সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে বলা যায় যে, খলীফা যে সমস্ত শারী'আহ্ বিধি-বিধান অনুসরণ করবেন এবং ইজতিহাদের যে পদ্ধতি অনুসরণ করবেন, তা দিয়েই তার কার্যাবলী সীমাবদ্ধ থাকবে। এ ব্যাপারে শরী'আহ্ দলিল হল, তিনি যে শারী'আহ্ আইন বাস্তবায়ন করবেন, ঐ আইনের ব্যাপারে তারই দ্বায়বদ্ধতা থাকবে, অন্য কারো নয়। অন্যভাবে বললে বলা যায় যে, খলীফা তার কার্যাবলী সম্পাদন করার জন্য ঐ নির্দিষ্ট শরী'আহ্ আইনটিই গ্রহণ করেছেন, যে কোন আইন গ্রহণ করেননি; তাই এ আইনের ব্যাপারে তার নিজস্ব দ্বায়বদ্ধতা রয়েছে। অর্থাৎ, খলীফা যদি কোন বিষয়ে নিজস্ব ইজতিহাদের মাধ্যমে কোন আইন গ্রহণ করেন কিংবা কোন মুজতাহিদের ইজতিহাদ অনুসরণ করেন, তবে উক্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে ঐ নির্দিষ্ট বিধানটি তার জন্য আল্লাহ্'র বিধান হিসাবে বিবেচিত হবে। তাই, মুসলিমদের জন্যও তাকে ঐ আইন গ্রহণ করতে হবে। অন্য কোন আইন গ্রহণ করা তার জন্য নিষিদ্ধ হবে কারণ, অন্য কোন আইনের ব্যাপারে তার কোন শরী'আহ্ দ্বায়বদ্ধতা নেই অর্থাৎ, এটি তার জন্য আল্লাহ্'র বিধান হিসাবে বিবেচিত নয় তাই, একইভাবে এটি মুসলিমদের জন্যও শারী'আহ্ বিধান বলে বিবেচিত হবে না। সুতরাং, জনগণকে শাসন করার ক্ষেত্রে তার গ্রহণকৃত শারী'আহ আইন সমূহের মাধ্যমেই তাকে বিধিবিধান জারি করতে হবে। তিনি এমন কোন আইন বা বিধি-বিধান জারি করতে পারবেন না যা তার অনুসৃত শরী'আহ্ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। কারণ, যদি তিনি তা করেন অর্থাৎ, তার গ্রহণকৃত শরী'আহ্ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক অন্য কোন (শরী'আহ্) আইনের মাধ্যমে তিনি যদি কোন বিধান জারি করেন, তবে এক্ষেত্রে তা হুকুম-শারী'আহ্'র সাথে সাংঘর্ষিক বলেই বিবেচিত হবে।
ইসতিনবাত বা ইজতিহাদের পদ্ধতির ভিন্নতার কারণেও শরী'আহ্'র হুকুম বোঝা বা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ভিন্নতা সৃষ্টি হয়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, খলীফা যদি আইনপ্রণেতার বাণী থেকে উৎসারিত ইল্লাহ্কে'ই (কোন হুকুম প্রণয়নের কারণ, effective legal cause of a rule) শরী'আহ্ সঙ্গত ইল্লাহ্ বলে মনে করেন এবং সেইসাথে, তিনি লাভ-ক্ষতিকে (মাসলাহা) শারী'আহ সঙ্গত ইল্লাহ্ কিংবা মাসালিহ্ মুরসালাকে (অসংজ্ঞায়িত পার্থিব লাভ-ক্ষতি) শারী'আহ সঙ্গত দলীলপ্রমাণ হিসেবে বিবেচনা না করেন, তাহলে এটাই তার জন্য ইসতিনবাতের পদ্ধতি হিসাবে বিবেচিত হবে। কারণ, এ পদ্ধতিই তিনি নিজের জন্য গ্রহণ করেছেন। এক্ষেত্রে, তার গৃহীত বিধি-বিধান এই নীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে এবং তিনি এমন কোন আইন গ্রহণ করতে পারবেন না যার দলীল-প্রমাণ মাসালিহ্ মুরসালাহ্'র উপর প্রতিষ্ঠিত; কিংবা, এমন কোন ক্বিয়াস গ্রহণ করতে পারবেন না যার ইল্লাহ্ আল্লাহ্'র বাণী থেকে উৎসারিত হয়নি। এই ধরনের শরী'আহ্ আইন তার জন্য আল্লাহ্'র বিধান হিসাবে বিবেচিত হবে না এবং এ আইনকানুনের ব্যাপারে তার কোনপ্রকার দ্বায়বদ্ধতাও থাকবে না; কেননা তিনি এ সমস্ত বিধিবিধানের উৎসকে শারী'আহ্ সঙ্গত উৎস বলে বিবেচনা করেননি। সুতরাং, তার দৃষ্টিকোন থেকে এগুলো শারী'আহ্ আইন হিসাবে বিবেচিত হবে না। আর, যেহেতু এটি খলীফার জন্য শারী'আহ্ আইন হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না, সুতরাং একইভাবে এটি মুসলিমদের জন্যও শারী'আহ্ আইন হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি যদি (তার গৃহীত ভিত্তি ছাড়া) অন্য কোন ভিত্তির উপর আইনকানুন গ্রহণ করেন, তাহলে বিষয়টি এমন হবে যেন তিনি শরী'আহ্ ব্যতীত অন্যকিছুকে ভিত্তি করে আইন গ্রহণ করলেন, যা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
আর, খলীফা যদি মুকাল্লিদ (অনুকারক) হন অথবা মুজতাহিদ ফী মাসা'লা হন অর্থাৎ একটি মাত্র বিষয়ের উপর তিনি ইজতিহাদ করে থাকেন; কিংবা তার যদি নিজস্ব কোন ইসতিনবাতের পদ্ধতি না থাকে, এ সমস্ত ক্ষেত্রে যে কোন শরী'আহ্ আইন গ্রহণ করার অধিকার তার রয়েছে, তার দলীল যাই হোক না কেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তার গ্রহণকৃত আইনকানুনের শারী'আহ সঙ্গত দলীল-প্রমাণ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত যে কোন বিধিবিধান গ্রহণের ক্ষেত্রে তার কোনপ্রকার সীমাবদ্ধতা থাকবে না। শুধুমাত্র কোন বিষয়ে নির্দেশ প্রদানের ক্ষেত্রেই তার সীমাবদ্ধতা থাকবে; কারণ তাকে তার গৃহীত বিধিবিধানের ভিত্তিতেই নির্দেশ প্রদান করতে হবে, অন্যকোন বিধানের উপর ভিত্তি করে নয়।